Saturday, March 10, 2018

দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্র লেখার পদ্ধতি


দোকান ভাড়া দেয়া এবং নেয়ার ক্ষেত্রে চুক্তিপত্র থাকা আবশ্যক। এক্ষেত্রে দোকানের মালিক ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে যে চুক্তিপত্র হয়, সে সম্পর্কে উভয়ের স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিত। আর সেজন্য কর্পোরেট সংবাদের পাঠকদের জন্য চুক্তিপত্রের নমুনা তুলে ধরা হলো।
দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্র
মো. সাজ্জাদ হোসেন, পিতা: ইমরুল হোসেন, মাতা- মরিয়ম বেগম, সাং-২নং কাকরাইল, থানা-পল্টন, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর: ১৯৭০…………….২৬৭. পেশা-ব্যবসা, ধর্ম-ইসলাম, জাতীয়তা-জন্মসূত্রে বাংলাদেশী।
…প্রথম পক্ষ/বাড়ি/ফ্ল্যাটের মালিক
এম শাহজাহান, পিতা: সোলায়মান হোসেন, মাতা: মারজিয়া বেগম, সাং-সোহাগপুর, থানা-বেলকুচি, জেলা-সিরাজগঞ্জ, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর ১৯৭৫………………১৮৯, পেশা-ব্যবসা, ধর্ম-ইসলাম, জাতীয়তা-জন্মসূত্রে বাংলাদেশী।
…দ্বিতীয় পক্ষ/ভাড়াটিয়া
পরম করুণাময় মহান সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরণ করিয়া অত্র দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের বয়ান আরম্ভ করিলাম। যেহেতু তফসিল বর্ণিত দোকান ঘরটি অত্র চুক্তিপত্রের প্রথম পক্ষের স্বত্ব খাস দখলীয় সম্পত্তি বটে। সেহেতু প্রথম পক্ষ নিম্ন তফসিল বর্ণিত উক্ত দোকান ঘরটি মাসিক ভাড়া দেয়ার প্রস্তাব করলে দ্বিতীয় পক্ষ তাতে শুধুমাত্র ঔষুধের ব্যবসা করার জন্য ভাড়া নিতে ইচ্ছা পোষণ করেন।
সেহেতু উভয় পক্ষ আলাপ আলোচনাক্রমে ১৩নং কাকরাইল, শান্তিনগর বাজার গলির পাবনা বিল্ডিয়ের নীচ তলার ৩নং দোকান মাসিক ১২০০০.০০ টাকা ভাড়া ধার্য্য করে নিম্নক্তো শর্তাবলী পালন সাপেক্ষে উভয় পক্ষ চুক্তিনামাটি সম্পাদন করলেন।
শর্তাবলি:
১। দোকান ঘরের মাসিক ভাড়া ১২,০০০.০০ (বার হাজার) টাকা ধার্য্য করা হল।
২। প্রত্যেক চলতি মাসের ভাড়া তৎপরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অত্র চুক্তিপত্রের দ্বিতীয় পক্ষ কর্তৃক প্রথম পক্ষ অথবা তাহার মনোনীত প্রতিনিধির বরাবরে পরিশোধ করতে হবে। প্রথম পক্ষ রশিদ প্রদানপূর্বক ভাড়া প্রাপ্তি স্বীকার করবেন।
৩। ২য় পক্ষ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত হারে উৎসে কর কর্তন করে ভাড়ার সাথে সমন্বয় করবেন এবং করের চালানের কপিসহ ১ম পক্ষকে হস্তান্তর করবেন এবং ২য় পক্ষ ১ম পক্ষের নিকট থেকে ১২,০০০.০০ টাকার রশিদ বুঝিয়া নিবেন। এছাড়া ২য় পক্ষ সরকার কর্তৃক মাসিক প্রদেয় ভাড়ার উপর নির্ধারিত হারে ভ্যাট পরিশোধ করবেন।
৪। ২য় পক্ষ তসফিলের দোকান ঘরটি কেবলমাত্র ঔষুধের ব্যবসা করবেন। অন্য কোন ব্যবসা করতে পারবেন না। যদি অন্য কোন ব্যবসা করেন, তাহলে চুক্তি ভঙ্গ হয়েছে বলে গণ্য হবে এবং ১৫ দিনের নোটিশে দ্বিতীয় পক্ষকে প্রথম পক্ষ উচ্ছেদ করতে পারবেন।
৫। অত্র চুক্তিনামার মেয়াদ ১লা সেপ্টেম্বর ২০১৭ হইতে কার্যকর হবে এবং উহা ৩১ আগষ্ট ২০১৯ ইংরেজি মোট ০২ (দুই) বৎসরের জন্য বলবৎ থাকবে। তবে অত্র চুক্তিপত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন শর্তে ও ১০% ভাড়া বৃদ্ধিক্রমে এর মেয়াদ যে কোন সময় পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে পক্ষদ্বয়কে অবশ্যই নতুন চুক্তিপত্র সম্পাদন করতে হবে।
৬। প্রথম পক্ষ দোকান ঘরের প্রয়োজনীয় মেরামত ও সংস্কার করে দিবেন।
৭। দ্বিতীয় পক্ষ তফসিলভুক্ত দোকানে সমাজ বা রাষ্ট্রবিরোধীন কোন কার্যকলাপ করতে পারবেন না। মার্কেটের অন্যান্য ভাড়াটিয়ার অসুবিধা, বিশৃঙ্খলা বা ব্যবসায়িক পরিবেশ বিঘ্নিত হয় এমন কোন আচরণ করতে পারবেন না। কোন প্রকার নিষিদ্ধ মালামাল বা বিস্ফোরক বা এসিড জাতীয় দ্রব্য মজুদ রাখতে বা বিক্রী করতে পারবেন না। এ জাতীয় কোন ব্যবসা করলে প্রথম পক্ষ ৭ দিনের নোটিমে দ্বিতীয় পক্ষকে উচ্ছেদ করতে পারবেন।
৮। দ্বিতীয় পক্ষ তফসিলভুক্ত দোকান ঘর এক নাগাড়ে দুই মাস বন্ধ রাখলে তাহা প্রথম পক্ষ ভাড়াটিয়াকে ৫ (পাঁচ) দিনের নোটিশে উচ্ছেদ করতে পারবেন।

৯। তফসিলভুক্ত দোকান ঘরের সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত পৌর কর, সরকারি খাজনা ইত্যাদি প্রথম পক্ষ বহন করবেন। দ্বিতীয় পক্ষ ব্যবসা সংক্রান্ত যাবতীয় কর, ট্যাক্স, ভ্যাট, বিদ্যুৎ, পানি পয়:নিষ্কাশন বিল ইত্যাদি পরিশোধ করবেন।
১০। দ্বিতীয় পক্ষ তফসিলভুক্ত দোকান ঘরে প্রথম পক্ষের লিখিত সম্মতি ব্যতীত কোনরূপ পরিবর্তন পরিমার্জন করতে পারবেন না।
১১। দ্বিতীয় পক্ষ কোন অবস্থাতেই মাসিক ভাড়ার টাকা বাকি রাখবেন না। প্রতি মাসের ০৭ তারিখের মধ্যে অবশ্যই পরিশোধ করবেন। কোন কারণে যদি দ্বিতীয় পক্ষ ভাড়া পরিশোধে অক্ষম হন তাহলে প্রথম পক্ষের কাছ থেকে ৭ দিনের সময় নিতে পারবেন এবং পরবর্তী ৭ (সাত) দিনে মধ্যে তিনি অবশ্যই ভাড়া পরিশোধ করবেন। যদি এক মাসের অধিক ভাড়া বাকি থাকে তাহলে প্রথম পক্ষ একটি লিখিত নোটিশ দ্বিতীয় পক্ষকে দিবেন এবং দ্বিতীয় পক্ষ সকল লেনদেন বুঝে নিয়ে দোকান গৃহ খালি করে দিতে বাধ্য থাকবেন।
১২। দ্বিতীয় পক্ষ দোকান ঘরের সরঞ্জামাদি, সাজ সজ্জা বা ডেকোরেশন ইত্যাদি নিজ দায়িত্বে করে নিবেন।
১৩। সরকারি বৈদ্যুতিক মিটারের রিডিং অনুযায়ি মাসিক যে বিল আসবে তা দ্বিতীয় পক্ষ নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবেন। বিল পরিশোধ শেষে বিলের কপি প্রথম পক্ষকে বুঝিয়ে দিবেন। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে বিলম্ব হলে অথবা যথাসময়ে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করলে কর্তৃপক্ষ যে কোন সময় বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারে এবং তার জন্য প্রথম পক্ষ দায়ি থাকবেন না।
১৪। সরকারি বিদ্যুৎ বিল ছাড়াও এলাকায় স্থাপিত জেনারেটরের মাসিক বিল পরিশোধে দ্বিতীয় পক্ষ বাধ্য থাকবেন।
১৫। দ্বিতীয় পক্ষ দোকান ঘরটি বা তার কোন অংশ কোনরূপ উপ-ভাড়া বা সাবলেট দিতে পারবেন না। যদি এমন প্রমান পাওয়া যায় যে, ঘরটি সাবলেট দিয়েছেন, তাহলে ১৫ দিনের নোটিশে প্রথম পক্ষ দ্বিতীয় পক্ষকে উচ্ছেদ করতে পারবেন।
১৬। অত্র চুক্তিপত্রের মেয়াদকালীন সময়ে দ্বিতীয় পক্ষ তফসিলোক্ত দোকান ঘর ছেড়ে দিতে চাইলে প্রথম পক্ষের বরাবরে তা ছেড়ে দিবেন এবং অন্তত: ১ (এক) মাস পূর্বে প্রথম পক্ষকে লিখিতভাবে জানাবেন।
১৭। প্রথম পক্ষের দোকান ঘরটি প্রয়োজন হলে আইন অনুযায়ি ৩০ (ত্রিশ) দিনের নোটিশে দ্বিতীয় পক্ষকে পাঠাতে হবে এবং দ্বিতীয় পক্ষ তফসিলভুক্ত দোকান ঘর প্রথম পক্ষের ধার্য্যকৃত সময়ের মধ্যে খালি ও অক্ষত অবস্থায় বুঝিয়ে দিতে বাধ্য থাকবেন।
১৮। দ্বিতীয় পক্ষ ভাড়াটিয়া কোনভাবেই তফসিলভুক্ত ঘর কোন প্রতিষ্ঠান ও কাস্টম বা ব্যাংকের নিকট দায়বদ্ধ করতে পারবেন না। কোন কারণে তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে তফসিলভুক্ত গৃহ প্রথম পক্ষের বরাবরে বুঝিয়ে দিতে বাধ্য থাকবেন।
১৯। যে কোন পক্ষ উক্ত শর্তসমূহের একটি ভঙ্গ করলে অত্র চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে এবং শর্ত ভঙ্গকারী এর জন্য দায়ি থাকবেন। প্রথম পক্ষের কারণে দ্বিতীয় পক্ষের কোন ক্ষতি হলে তজ্জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিবেন এবং দ্বিতীয় পক্ষ কোন ক্ষতি করলে প্রথম পক্ষকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন।
এতদ্বার্থে সুস্থ মস্তিস্কে, সেচ্ছায়, সজ্ঞানে এবং কারো বিনা প্ররোচনায় অত্র অস্থায়ী ভাড়ার চুক্তিপত্রটি এবং উহার শর্তসমূহ পড়ে এবং পড়িয়ে এবং ইহার মর্ম সম্যখ অবগত হয়ে পক্ষগণ অত্র চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করে চুক্তিপত্রটি সম্পাদন করলেন।
তফসিল:
পল্টন মৌজায় ১৩নং কাকরাইল, শান্তিনগর বাজার গলির ৫তলা বিল্ডিংয়ের নীচ তলায় ৩নং দোকান ঘর যার আয়তন ৩০০ বর্গফুট।
সাক্ষীগণের স্বাক্ষর:
১।
২।
৩।
….প্রথম পক্ষ/মালিকের স্বাক্ষর
….দ্বিতীয় পক্ষ/ভাড়াটিয়ার স্বাক্ষর